করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চলমান অঘোষিত লকডাউনে সবাই যখন ঘরবন্দী জীবনযাপন করছেন তখন অভুক্ত ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের কথা ভেবে টিম-১৯ দাঁড় করিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার কিছু তরুণ। তারা নিয়মিত দুই বেলা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন চাইতে না জানা মানুষদের।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাত থেকে পঞ্চগড়ের অন্যান্য উপজেলার মতো তেঁতুলিয়াতে দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় হোটেল-রেস্তোরাঁও। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েন হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীনরা। হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা থাকলে তাদের ভাগ্যে কোনো না কোনোভাবে খাদ্য জুটে যায়। কিন্তু এখন তাদের উপোস থাকা ছাড়া উপায় নেই। এছাড়া নোংরা থাকায় তাদের কাছে মানুষজনও তেমন ঘেঁষে না। এদের বেশির ভাগই ক্ষুধার জ্বালা প্রকাশ করতে পারেন না। যেখানে সেখানে অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাদের।
চলমান পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের সাহায্যে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠন এগিয়ে এলেও ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের কথা কেউ খুব একটা ভাবেনি। কিন্তু অসহায় এ মানুষদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তেঁতুলিয়া উপজেলার ১০-১২ জন তরুণ টিম-১৯ নাম দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং ২৮ মার্চ থেকে তারা ভবঘুরেদের নিয়মিত দুই বেলা খাবার দিচ্ছেন।
টিম-১৯-এর ছয়জন করে সদস্য দুটি দলে বিভক্ত হয়ে রান্না করা খাবার মোটরসাইকেলে নিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনদের খুঁজে খুঁজে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রতিদিন উপজেলার ৬০ থেকে ৭০ জন ব্যক্তিকে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন এ সংগঠনের তরুণরা। কোনো দিন খিচুরি আবার কোনো দিন ভাত, মাংস ও সবজি দিয়ে প্যাকেট তৈরি করেন তারা। সাথে দেন পানির বোতলও। এসব পেয়ে কথা না বলা মানুষগুলোর চোখে দেখা যায় পরম স্বস্তি।
সংগঠনের আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন রকি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা লক্ষ্য করলাম এ শ্রেণির মানুষরা খাবার সংকটে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছেন না। তাই আমরা টিম-১৯ গড়ে তুলি। নিজেরা যে যার সামর্থ্য মতো টাকা দিয়ে তাদের প্রতিদিন দুই বেলা খাবার তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার মা নিজেই প্রতিদিন রান্না করে দেন। সেই রান্না করা খাবার প্যাকেট করে আমরা মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীনদের পৌঁছে দেই। যত দিন এ পরিস্থিতি থাকবে আমাদের সেবা চলমান রাখব। কোনো প্রচার প্রচারণার জন্য নয়, নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকেই এ কাজ করে যাচ্ছি।’
তেঁতুলিয়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষরা বর্তমানে অসহায়। তাদের দুই বেলা খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে টিম-১৯। তাদের এ কার্যক্রমকে চলমান রাখার জন্য আমরা সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি।’
এদিকে, পঞ্চগড় শহরে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরেদের নিজ উদ্যোগে খাবার দিচ্ছেন জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম শহীদ। তিনি নিজেই বাড়িতে খিচুরি রান্না করে প্রতিদিন শহরের আশপাশে থাকা ৩০ থেকে ৪০ ব্যক্তির কাছে তা পৌঁছে দিচ্ছেন।